অণুগল্প: মিউচুয়াল ফ্রেন্ড
একদিন টের পেলাম, তুমি আমাকে ব্লক করে দিয়েছ। ফেসবুকে আর তোমাকে দেখতে পাবো না। কারণটা তোমাকে আর জিজ্ঞাসা করতে চাইলাম না, যদিও তোমার মোবাইল নাম্বার আমার কাছে আছে। কারণটা আমি নিজে নিজেই বুঝতে পেরেছি, ব্রেক-আপের পর তুমি আর চাইছই না যে, আমি কোনভাবে তোমার সাথে কানেকটেড থাকি, যদিও আমি তোমাকে কোনরূপ নক বা বিরক্ত করতাম না। আমি শুধু নীরবে তোমার ছবি দেখতাম আর আমাদের সুখ স্মৃতিগুলো রোমন্থন করতাম। ছোটবেলায় ট্রান্সলেশন শিখতে গিয়ে পড়েছিলাম There is of no avail to lament the past। আমি সেটা মানি না, স্মৃতি রোমন্থন করার মধ্যেও এক ধরনের সুখ আছে। ব্রেক-আপের কারণটিও তুমি আমাকে বলো নি, সেটাও আমি নিজে নিজেই বুঝতে পেরেছিলাম, কারণটা ছিলো ‘ভুল সংশোধন’, যদিও ভুলটি আমাদের দুজনারই ইচ্ছাকৃত ছিলো! জেনেশুনে বিষ পান করার মত! প্রত্যেক-টি মানুষের জীবনই full of mistakes। মেঘের পরে মেঘ জমে যেমন ঝড়-বৃষ্টি আসে, জীবনেও তেমনি ভুলের পরে ভুল জমে ঝঞ্ঝাবিক্ষুদ্ধ হয়। ঐ তীব্র ঝাঁপটার মধ্য দিয়েই আমরা পথ চলি। যদিও সময় পেরিয়েছে অনেক। পদ্মা-মেঘনা দিয়েও জল গড়িয়েছে কম নয়। সেই রিক্ত পদ্মার উপর আবার এখন ব্যায়বহুল সেতুও দৃশ্যমান হতে চলছে! তারপরেও তোমাকে ভুলতে পারিনি। ভুলতে চাইওনি। মানব-মানবীর বিশুদ্ধ ঐ অনুভুতিটুকুর মৃত্যু না হওয়াই ভালো। তাই মাঝে মাঝে তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করে। তবে জীবন তো আর সিনেমা নয় যে, কোন এক দৃশ্যে পরিচালক হুট করে দুজনার দেখা করিয়ে দেবেন, দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী। তবে always there is a way out। ডিজিটাল এই যুগে আন্তর্জাল আমাদের বন্ধু। গুগলে সার্চ দিয়ে তোমার ছবি পেয়েছিলাম দু’একটা, সেই দেখেই সাধ মিটিয়েছিলাম। তবে আমার যে বড় জানতে ইচ্ছে করে, আজ তুমি কেমন আছো? নতুন শাড়ীতে তোমাকে কেমন লাগছে? মৌসুমী মেলায় কোন রঙের টিপটিতে তোমাকে মানিয়েছে বেশ!? ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইটের যুগে রিয়েল টাইম রেজিম-এ কারো তথ্য জানতে চাওয়ার অভিলাষ স্বাভাবিক নয় কি? ও হ্যাঁ, একবার সিনেমার মতই হুট করে দেখা হয়ে গিয়েছিলো তোমার এক বন্ধুর সাথে। ওর কাছ থেকে তোমার অনেক সংবাদ জেনে নিয়েছিলাম। সেও বোধহয় মায়া করে আমাকে সবই বলেছিলো। তদুপরী, তোমাকে তো দেখতেই ইচ্ছে করে তাই না? ঐ যে বললাম, always there is a way out। আজ হঠাৎ করেই তোমার এক ফ্রেন্ড-কে পেয়ে গেলাম ফেসবুকে। পাঠিয়ে দিলাম ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, একসেপটেন্স পেয়ে গেলাম প্রায় সাথে সাথেই। দুম করে ঢুকে গেলাম তার টাইমলাইন ও ফটো এ্যালবামে। ইয়েস, তুমি সেখানে আছো। সারি সারি গ্রুপ ছবির মধ্যে, কোন না কোন অবস্থানে তুমি আছো। সেই তুমি, যাকে নিয়ে আমি কবিতা লিখেছিলাম; সেই তুমি, যাকে নিয়ে আমি গল্প লিখেছিলাম, সেই তুমি, যে ছিলো আমার মহাকাব্যের ব্রাইসিস – ‘এ লিটল রোমান্স ইন এ ডিভাস্টেটিং ওয়ার!’ ব্লক করতে চাইলেই কি আর এ্যাবসুলুটলি ব্লক করা যায়? আমাদের মিউচুয়াল ফ্রেন্ড আছে না? সেই ঘুরপথের অলিগলি দিয়ে ঢুকে পড়ে তোমার অজান্তে আমি তোমাকে দেখবোই।
—————— রমিত আজাদ
তারিখ: ২৩শে মে, ২০১৮
সময়: রাত ১২টা ২মিনিট