উত্তাল ঢেউ (High Tide – Ramit Azad)
উত্তাল ঢেউ
——————– রমিত আজাদ
মনে পড়ে,
একবার আমরা একত্রে বিজয় উৎসব পালন করেছিলাম?
স্বৈরাচারের পতনে বিজয়!
ঢাকার টিএসসি থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ছিলো আনন্দের উত্তাল ঢেউ!
বয়স ও লিঙ্গের ভেদ ভুলে কেমন উচ্ছাসে মেতে উঠেছিলাম সবাই!
কোভিড সংক্রমণের ভয় ছিলো না তখন,
তাই গায়ে গা লাগানো গণসমাবেশে কেউ মুখোশ পড়েনি।
সকলেই ছিলো তার স্ব স্ব রূপে।
সেদিন তুমি ছিলো সদ্য যৌবনে,
আমিও ছিলাম প্রস্ফুটিত গোলাপ!
এর আগে কিশোর তুমি কয়েকবার রাজপথে নেমেছিলে লাঠি হাতে।
স্কুলের মঞ্চে নির্ভীক বক্তৃতা করেছিলে স্বৈরাচার বিরোধী!
সবাই থ মেরে গিয়েছিলো, পিচ্চি ছেলের অমন সাহসী কথা শুনে!
ভাগ্যিস অধ্যক্ষ ছিলেন ‘ভাষা সৈনিক’!
তিনি সেযাত্রা তোমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন।
আমি শৈশবে তোমাকে মিছিলে দেখেছি একাধিকবার।
আমার নেশাতুর চোখে মনে হতো,
এ দেশে যোদ্ধারা বারবার জন্ম নেবে!
দেশব্যাপী বন্যায় আমি দেখেছি,
সাঁতার না জানা তুমি, নৌকা নিয়ে কেমন ছুটে গিয়েছিলে
পানিবন্দি মানুষদের সাহায্য করতে!
আমি বড় বড় বীরদের কখনোই দেখিনি চাক্ষুষ।
কেবল বইয়ে পড়েছি তাদের বীরত্বগাঁথা।
আর আমার অনন্ত ক্ষুদ্র বৃত্তে, তুমিই ছিলে বীর!
একবার তোমার লেখা একটি দ্রোহের কবিতা পড়ে শুনিয়েছিলে,
আমি তোমার চোখে আগুন দেখেছিলাম সেদিন।
বুঝেছিলাম এদেশ দ্রোহী কবিদের দেশ!
ইদানিং আর সময় করে উঠতে পারি না।
পড়বার আগ্রহও গিয়েছে কমে।
শুনেছি তুমি এখনও কবিতা লেখো,
তবে তার সকলি প্রেম ও বিরহের কবিতা!
তুলে রাখো প্রেম! ভুলে থাকা যায়না বিরহ?
আমি আর চাইলেও তোমার হতে পারবো না।
বরং ওদিকটায় দেখো,
ক্রমাগত সংক্রমণের ঢেউয়ে
মুখোশে মুখোশে ছেয়ে গেছে জনপদ।
কেউ তার স্বরূপে নেই!
এতগুলো মুখোশের ভীড়ে আমি তোমাকে চিনতে চাই,
তুমি কি আরেকটি দ্রোহের কবিতা লিখবে?
রচনাতারিখ: ০৮ই আগস্ট, ২০২১ সাল
রচনাসময়: রাত ০৩টা ৪৯ মিনিট
High Tide
————— Ramit Azad