উন্নয়ন কাকে বলে?
উন্নয়ন কাকে বলে?
বুদ্ধদেব বসুর লেখা প্রবন্ধগুলোর ধার অনেক। তবে আমি উনার লেখা পড়েছি কম। দু’একদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীর শেলফে আমার চোখে পড়লো বুদ্ধদেব বসুর ‘শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ’ বইটি। নিয়ে পড়তে শুরু করলাম। আমার চোখ আটকে গেলো ঐ বইয়ের ‘সভ্যতা ও ফ্যাসিজম’ নামের একটি প্রবন্ধের কিছু লাইনে। আমি লাইনগুলো তুলে দিচ্ছি।
‘রাজনীতির যে একটা বড় রকমের সংজ্ঞা আছে তার প্রত্যক্ষ পরিচয় পরাধীন দেশে পাওয়া সহজ নয়। আমাদের এ্যাসেম্বলি সভার বিতর্ক, আমাদের মন্ত্রীদের বক্তৃতা সবই যেন একটা অনুষ্ঠান মাত্র, তার পিছনে যথার্থ শক্তি নেই আর তাই এর অবাস্তবিকতা এক-এক সময় দুঃসহ হয়ে ওঠে। যার সঙ্গে বাস্তব জীবনের যোগ এত ক্ষীণ যে তার সম্বন্ধে সাধারণ লোকের উদাসীন হওয়া ছাড়া উপায় থাকেনা।’
‘সকল মানুষকে লৌহ শাসনের যন্ত্রে পিষ্ট না করলে যাদের (ফ্যাসিস্টদের) চলেনা। তাদের আদর্শ ও কর্মপদ্ধতি এমনই যে সকলের আগে কবির মুখ বন্ধ করা তাদের দরকার, কেননা কবি সত্য ও সুন্দরের উপাসক।’
‘একবার একটি কলেজের ছাত্র আমাকে বলেছিলো, “হিটলারের আমলে জার্মানীর কি আশ্চর্য উন্নতি হয়েছে তা তো দেখেছেন। আমাদের দেশে এই রকমই দরকার।” আমি তাকে বললাম, “ওরা আইনস্টাইন-কে তাড়িয়েছে –“, সে বাধা দিয়ে বললো, “জ্যু-রা ভয়ানক খারাপ লোক, তাদের তাড়ানোই উচিত।” আমি তাকে জিজ্ঞেস করলুম, “আচ্ছা ধরো আমাদের স্বদেশী হিটলার যদি রবীন্দ্রনাথকে তাড়াতে চায়, তুমি তাতে রাজি আছো?” সে একটু চুপ করে থেকে বললো, “দেশের উন্নতির জন্য যদি রবীন্দ্রনাথকে তাড়াতে হয়, তবে তাড়াতেই হবে।” আমি বললুম, “যে উন্নতির জন্য রবীন্দ্রনাথকে তাড়াতে হয় সে উন্নতি আমি চাইনা। কারণ মনে-মনে আমি নিশ্চিত জানি যে, সেটা উন্নতি নয়, ঘোর অবনতি।”
রমিত আজাদ