তাকে কি খুঁজে পাবো?
——————– রমিত আজাদ
কবে আমার পাঠকালীন অবকাশ হবে,
আর আমি তেরো নদীর ওপার থেকে
রেলে চড়ে বাড়ি ফিরবো;
তার জন্য যার মন আকুলি-বিকুলি করতো!
আমি বাড়ি ফিরলেই সে উচ্ছল হয়ে উঠতো!
স্নিগ্ধ বিকেলের ঘোরাঘুরি শেষে
আমার ফেরার পথে যে অপেক্ষা করতো;
ফ্লাটের জানালায় পর্দার আড়াল থেকে
যে নীরবে আমাকে দেখতো;
লোকারণ্যেও আমাকে দেখার জন্য যে
দালানের সামনে অলক্ষ্যে দাঁড়িয়ে থাকতো।
শিশুদের সাথে খেলার ছলে বিপুল ব্যগ্রতায়
আমার বেলকুনির নীচেই যে ছুটোছুটি করতো!
চোখে চোখ পড়লে যে লাজে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিতো।
উদ্বেলিত দিগ্বলয়ে দুরাশা বাসনার অতৃপ্ত আরাধনায়!
সদ্য কৈশোর পেরুনো ভালো লাগার নতুন অধিযুগে
নব অনুভূতির যাতনায় আর সইতে না পেরে,
যে কোন এক ছলে আমার ঘরে এসেছিলো।
আত্মসমর্পণের কাছাকাছি সংবেদনে
অবশেষে মুখ ফুটে বলেছিলো,
“আপনি ভালো আছেন?”
বিদায়ের দিন
নীরবে সিঁড়ির গোড়ায় যে দাঁড়িয়েছিলো,
শেষ বিন্দুটি মিলিয়ে যাওয়া পর্যন্ত!
তারপর হয়তো অপেক্ষা করেছিলো
মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমানের শব্দ শোনার!
যে বিমান আমাকে নিয়ে যায় সাত সমুদ্রের ওপারে!
সেই দীপ-নেভা যান্ত্রিক শব্দের সাথে
তার দীর্ঘশ্বাস মিশে গিয়েছিলো কিনা জানিনা।
যাকে নিয়ে সেদিন কোন কবিতাই লিখিনি,
এলোমেলো ভাবনাও কিছু ভাবিনি।
মনে রাখতে চাইনি তার কেশের রঙ,
মস্তিষ্কে গ্রন্থিত করিনি তার গ্রীবার গড়ন!
ধীরে ধীরে মুছে ফেলেছি টুকরো স্মৃতিগুলো।
সাত সমুদ্র আর তেরো নদীর ওপার থেকে
স্মৃতিগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা নিরর্থক!
সুদুরিকা ছিলো, সুদুরিকাই রয়ে গেলো!
আজ বিধ্বস্ত ধরিত্রী!
যত জীব-প্রাণ চরাচরে আক্রান্ত অণুজীবে শঙ্কিত!
তবুও তৃষ্ণা অন্তহীন জাগে নিষ্পন্দ কল্পতরুতে,
বন্দী পৃথিবীর ভয়ার্ত মধ্যতিথিগুলোতে
মাঝে মাঝে তাকে মনে পড়ে কুহেলিকায়!
তাকে কি খুঁজে পাবো?
রচনাতারিখ: ০১লা জুন, ২০২০ সাল
সময়: রাত ০২টা ৩২ মিনিট
Can I Find Her?
———————- Ramit Azad