পরিসংখ্যানভিত্তিক নয় এমন কিছু বলা বা করা অবিবেচক লোকের কাজ
——————————— রমিত আজাদ
‘পরিসংখ্যান’ নামক সাবজেক্ট-টির সাথে প্রথম পরিচয় অষ্টম শ্রেণীতে। তা ছিলো যৎসামান্য। এই ‘ফ্রিকুয়েন্সী ডিস্ট্রিবিউশন টেবিল’-টা আর ‘মেজারস অব সেন্ট্রাল টেনডেন্সি’-র মীন-মিডিয়ান-মোড, ব্যাস। তখন সেটাকে গণিতের-ই একটা শাখা মনে করতাম। এরপর একাদশ শ্রেণীতে ওঠার পর ছিলো দুটা অপশন – বায়োলজী আর পরিসংখ্যান। বায়োলজী ভালো লাগতো না, নবম-দশম শ্রেণীতে বায়োলজী যতটুকু পড়েছিলাম তা বাধ্য হয়েই পড়েছিলাম। যেহেতু মনে মনে ঠিক করেই রেখেছিলাম যে ভবিষ্যৎ জীবনে ডাক্তার হবোনা, তাই নির্দ্বিধায় বায়োলজি বাদ দিয়ে পরিসংখ্যান নিয়ে নিলাম। শুরুতে কয়েকমাস আমাদের পরিসংখ্যান ক্লাস নিয়েছিলেন একজন দক্ষ শিক্ষক, তবে তিনি তারপর কলেজের চাকরীটা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারপর এলেন বিমান রায় চৌধুরী স্যার। মাত্র বিশ্ববিদ্যালয় জীবন সমাপ্ত করে আসা তরুণ, মেধাবী, সুদর্শন ও অত্যন্ত ভালো মানুষ বিমান রায় স্যারকে দেখে আমরা মুগ্ধ হয়েছিলাম। স্যার কলেজে শুরুতেই কর্তৃপক্ষের কাছে একটা সুন্দর দাবী করেছিলেন এবং স্যারের সুবাদে আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানতে পেরেছিলাম। স্যার বলেছিলেন যে, কলেজে পরিসংখ্যান সাবজেক্ট-টি গণিত ডিপার্টমেন্টের অধীনস্থ, এটা কেন হবে? পরিসংখ্যান একটি ভিন্ন সাবজেক্ট, তাই পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়েই পরিসংখ্যান আলাদা একটি ডিপার্টমেন্ট; স্যার চাইলেন আমাদের কলেজেও পরিসংখ্যান আলাদা একটি ডিপার্টমেন্ট হোক। যতদূর মনে পড়ে স্যারের দাবী শেষ পর্যন্ত মেনে নেয়া হয়েছিলো। স্যার এই ঘটনার মধ্য দিয়ে আমাদের একটা ভুল ভাঙিয়েছিলেন, আমরা ভাবতাম পরিসংখ্যান গণিতের একটি শাখা, আসলে তা নয়, পরিসংখ্যান নিজেই একটি সাবজেক্ট। সেখানে গণিত ব্যবহৃত হয় এই যা। স্যার আমাদের খুব মনযোগ দিয়ে অনেক কিছু পড়িয়েছিলেন, এবং আমরা যেটা ভালো বুঝতে পেরেছিলাম তা হলো, এই সাবজেক্ট-টির গুরুত্ব অপরিসীম, এবং পরিসংখ্যান জ্ঞান না থাকার কারণেই আমরা অনেক কিছুই ভুল বুঝি, ভুল বলি, ভুল করি।
একটা ছোট্ট উদাহরণ দেই – আমরা প্রায়শঃই বলে থাকি যে, ‘বেশীরভাগ লোকেই বলে ……….’, অথচ বেশীরভাগ মানেই হলো, মোর দ্যান ফিফটি পারসেন্ট; কিন্তু আমরা কোনরূপ জরিপ না করেই আমাদের মনগড়া পাঁচ পার্সেন্ট বা দশ পার্সেন্ট-কেও বেশীরভাগ বলছি। তথ্য সংগ্রহ করে জরীপ না করে চট করেই যদি বলে দেই, ‘সব দেশেই তো এমন’ বা ‘সবাইতো বলে’, বা ‘কোন দেশেই নাই’, এগুলো অপরিসংখ্যানিক (অবিজ্ঞানমনষ্কও বলা যায়) মন্তব্য বা আচরণ।
পরিসংখ্যানভিত্তিক নয় এমন কিছু বলা বা করা অবিবেচক লোকের কাজ!