বিষণ্ণ শ্রাবণ
বিষণ্ণ শ্রাবণ
——- রমিত আজাদ
জননী,
স্কুলড্রেস পড়ানো শেষ হলে,
বইয়ের ব্যাগ কাঁধে তুলে দিতে দিতে
তুমি আমাদের শ্রাবণ শিখিয়েছিলে।
যে শ্রাবণে উর্বর হয় মাটি,
সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় মাঠভরা ফসলের!!
জননী,
সুগন্ধি আতরের খোশবু পায়নি যে মনুষ্য,
পৃথিবীর নিত্যকার পূতিগন্ধেই সে অভ্যস্ত।
এহেন সমাজে অনিয়মটাই নিয়ম!
অনিয়মের ব্যত্যয় ঘটানোটাই বেআইন!
জননী,
ভোরের আলো ফুটতেই আমি কাঁধে নেই ব্যাগ,
উল্লসিত হয়ে বলি, ‘আমি স্কুলে যাবো মা’।
ছুটির পরে খেলতে যাবো মাঠে,
মাগরীবের আজানের আগেই ঘরে ফিরে পড়তে বসবো।
তোমার ছেলে বড় হবে মা, অনেক অনেক বড়!!!
জননী,
স্কুলড্রেস পড়া লম্বাচুল বালিকাটির কত যে স্বপ্ন ছিলো!
সেইসব স্বপ্নের কথা সে মন খুলে বলতো সহপাঠিদের।
তৃণভূমি মারিয়ে, পাহাড় পেরিয়ে, দিগন্ত ছাড়িয়ে,
সে দেখতে যাবে মাঠের পারের দূরের দেশ,
পাহাড়ের চূড়ায় উজ্জ্বল নগরী!
জননী,
ক্লাসরূমে পড়ানো
বইয়ের গাদায় ঘুমানো একঘেয়ে ইতিহাস,
অর্থহীন কবিতার নিরর্থক পংক্তিগুলো,
অবেলায় পাংশুটে হলো।
অবশেষে বিদ্রোহী হলো নিষ্পাপ শৈশব!
জননী,
চাঁদের হাসি থেমে গেছে,
অহমিকার ঔদ্ধত্য ভেঙ্গেছে বাধ।
ত্রাসের কারাগারে মুক্তবাক বাজেয়াপ্ত,
স্কুলফ্রকে মুখ লুকিয়েছে বালিকারা।
তবে কি বিবেক নিদ্রিত? না কি সে ছিলো-ই না???
জননী,
এখন তোমরা সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে ভয় পাও,
নবজাতকের সুতীব্র আর্তনাদ,
না না এই মাটিতে জন্ম চাইনা!!!
জননী,
এহেন কদর্য সমাজের নির্লজ্জ্বতায়
মুছে যায় কিশোরের সম্ভাবনা,
ভেঙ্গে যায় কিশোরীর স্বপ্ন।
বাতাবী লেবুর বাম্পার ফলনেও দীর্ঘশ্বাস!
ম্লান হয়ে যায় বৃষ্টিঝরা সেতারের সুর,
স্বপ্নালু মানুষের ঘরে হানা দেয় দুর্বৃত্ত!
জননী,
এবারের শ্রাবণ বিষণ্ণ !!!
——————————————————-
তারিখ: ৭ই আগস্ট, ২০১৮
সময়: দুপর ১২টা ০১ মিনিট