মেট্রোরেলে প্রেম (পর্ব ১১)
মেট্রোরেলে প্রেম (পর্ব ১১)
(কঠোরভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য)
——————————————– রমিত আজাদ
রুশীদের জীবনে যৌনতা অবাধ। এই দেশে ছাত্র-ছাত্রীরা একই ডরমিটরিতে থাকে। সেখানে স্বেচ্ছায় সম্পর্কে কোন বাধা তো নেই-ই বরং যথেষ্ট ফ্রীডম রয়েছে। রুশীদের অনেকেরই পারিবারিক জীবন ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী চলে না। দাম্পত্য বন্ধনের চাইতে দাম্পত্য ফ্রীডমই বেশী। তরুণীদের একটা বিরাট অংশ সহজলভ্য। আরও রয়েছে সিঙ্গেল মাদারস। লক্ষ লক্ষ সিঙ্গল মাদার রয়েছে এই দেশে। কামুক পুরুষদের বিনোদনের জন্য এরা একটা ভালো উপকরণ; আর একাকিত্বের যন্ত্রণা থেকে সাময়িক উপশম পেতে সিঙ্গেল মাদাররাও উৎসাহী থাকে প্রেমিক পুরুষদের সঙ্গ পেতে। এইভাবে শারীরিক স্ফুর্তির উপকরণ মোটেও দুর্লভ নয় এই দেশে! এই কারণে এই দেশে নাইটক্লাব-এর প্রয়োজন তেমন একটা আছে বলে থিওরেটিকালি মনে হয় না। তারপরেও এখানে প্রচুর পরিমাণে নাইটক্লাব আছে। কম্যুনিস্টদের শাসনামলে সো কলড কড়াকড়ির অজুহাতে নাইটক্লাবের অনুমোদন ছিলো না। কিন্তু ঐ যে বলে চাহিদা কে ঠেকাতে পারে? তলে তলে বা আন্ডারগ্রাউন্ডে সবই চলতো। অসহনীয় সেই শাসনামলে আইনই ছিলো অত্যাচারের মাধ্যম। আইনকে ব্যবহার করে অত্যাচার করার মত বড় অত্যাচার আর নাই! কম্যুনিস্টরা প্রচার-প্রচারণা চালাতো যে, তাদের দেশে মানব কর্তৃক মানব-কে শোষণ করা হয় না, সেই সুযোগ নেই। কিন্তু কথা হলো যে, রাষ্ট্র নিজেই যেখানে শোষক সেখানে আর ব্যাক্তি শোষণের দরকার পড়ে না।
কম্যুনিস্টদের শাসনের অবসান হলে, অনেক কিছুরই অনুমোদন দেয়া হয়। ক্যাসিনো ও নাইটক্লাব তাদের মধ্যে অন্যতম। আবারো প্রশ্ন জাগে যে এই যৌন ফ্রীডম-এর দেশে নাইটক্লাবের প্রয়োজন আছে কি? এর উত্তর দিয়েছিলেন একজন নাইটক্লাব ব্যাবসায়ী, “চাহিদা যেহেতু আছে, ক্লায়েন্ট যেহেতু পাওয়া যাচ্ছে, তার মানে প্রয়োজন আছে।”
প্রশ্ন জাগে যে যৌনতার এই প্রসস্ততা ও প্রসারতা কেন? শুধু কি রাশিয়া, ইউক্রেইন? এই অবাধ যৌনতা তো পুরো ইউরোপ ও নর্থ আমেরিকা জুড়েই! কেন? বাংলাদেশের মত দেশগুলোতে মানুষকে প্রতিদিন সংগ্রাম করতে হয় দারিদ্রের সাথে। দুমুঠো ভাত জোটানোই যেখানে কষ্টকর সেখানে স্ফুর্তির সময় মানুষ পাবে কোথায়? তাছাড়া আমাদের কালচার ও দর্শনে যৌনতার ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া হয়েছে রোমান্টিকতাকে। পাশ্চাত্যে বিষয়টা উল্টাই, সেখানে যৌনতার স্থান রোমান্টিকতার ঊর্ধ্বে। উপরন্তু যে সব দেশে অর্থনৈতিক এ্যাচিভমেন্ট বেশী অর্থাৎ, মৌলিক চাহিদাটা কোন সমস্যা নয়। সেখানে পরবর্তি ধাপে মানুষ ঝুঁকে পড়ে যৌনতায়। প্রাচীন থেকে যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত, রোম সাম্রাজ্য থেকে শুরু করে মোগল সাম্রাজ্য পর্যন্ত বিশাল বিশাল সব সাম্রাজ্যে ঐ একই বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছে।
পাশ্চাত্যে বসবাস করেনা, বাংলাদেশেই স্থায়ী। এরকম কেউ কোন কাজে ইউরোপে গেলে তাদেরও অন্যতম আকর্ষণ থাকে এই নাইটক্লাব। একবার একদল বাংলাদেশীদের ডেলিগেশন এলো মস্কোতে। তাদের বেশিরভাগই ব্যাবসায়ী, দুএকজন আমলাও আছেন। নয়নের সাথে তাদের আলাপ হলো কোথাও। কিছুক্ষণ আলাপ-সালাপ-এর পরে ডেলিগেশন-এর একজন বললো, “ভাই তো এই দেশে আছেন বহুদিন যাবৎ, তা এই ট্রিপে আমাদের একটু হেল্প করেন না।” নয়ন বললো, “কি হেল্প চান বলুন।” সে বললো, “ঐ আর কি। বোঝেনই তো ঢাকায় ওগুলো নেই। আর থাকলেও পারিবারিক সামাজিক নানান রকমের রেস্ট্রিকশন! তাই সম্ভব হয় না।” আর বিদেশে আসলে তো কিছুটা ফ্রীডম পাই, তাই আর কি। পুরুষ মানুষ একটু তো বোনোদন চাইবো-ই। বুঝলেন তো?”
নয়ন: আপনি কি নাইটক্লাবে যেতে চাইছেন?
ব্যবসায়ী: এই তো ধরতে পেরেছেন। ওটাই তো চাই।
নয়ন: ঠিকআছে আপনাদের ঠিকানা বলে দিচ্ছি। তবে মস্কোতে কিন্তু খুব এক্সপেনসিভ! আমেরিকার চাইতেও বেশী।
ব্যবসায়ী: আরে খরচের ভয় আমরা পাই না। আমরা আমেরিকানদের চাইতে বেশি টাকাই কামাই।
নয়ন: ওকে।
ব্যবসায়ী: ভাই ঐ নাচ থাকবে তো?
নয়ন: কোন নাচ? স্ট্রীপটিজ?
ব্যবসায়ী: এই তো ধরতে পেরেছেন। এখানকার মেয়েগুলা যা সুন্দরী! আমাদের চোখ তো সবই দেখতে চায়।
নয়ন: ঠিকআছে, স্ট্রীপটিজ আছে ওরকম নাইটক্লাবের ঠিকানাই দিয়ে দেব আপনাদেরকে।
ব্যবসায়ী: থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ। অনেক উপকার করলেন।
নয়ন ভাবলো। একই বাংলাদেশীদের দুইরূপ। দেশে একরকম আর বিদেশে আরেক রকম! নাকি রূপ একটাই, শুধু স্থান ভিন্নতা রয়েছে?
লুদ্ধক ভাই বাংলাদেশী হলেও বেশ সাহসী মানুষ। মস্কোতে একাধিক ব্যবসা উনার। আমলা, পুলিশ, মাফিয়া সবদিক মেইনটেইন করে ভালো-ই ব্যবসা করে যাচ্ছেন। উনার অফিসে একদিন গেলো নয়ন।
লুদ্ধক ভাই: আরে নয়ন যে! অনেকদিন পরে দেখলাম। কেমন আছো?
নয়ন: যাচ্ছিলাম এই পথ দিয়ে। ভাবলাম আপনার সাথে একবার দেখা করে যাই।
লুদ্ধক ভাই: ভালো করেছ। থাকো কিছুক্ষণ গল্প-স্বল্প করি।
নয়ন: ব্যবসা কেন যাচ্ছে আপনার?
লুদ্ধক ভাই: নট ব্যাড। যেই দেশে যা আর কি। এখানকার ব্যবসা এখানকার মত। প্রসাশন, পুলিশ, মাফিয়া সবাইকে তুষ্ট রাখো, ব্যবসা টিকবে। তা নইলে ব্যবসা তো দূরের কথা, নিজেই চৌদ্দ শিকে চালান হয়ে যেতে পারি। ইদানিং নতুন একটা ব্যবসা শুরু করেছি।
নয়ন: নতুন ব্যবসা? তাই নাকি? কিসের ব্যবসা?
লুদ্ধক ভাই: নাইটক্লাব।
নয়ন: জ্বী? (বিস্মিত হয়ে)
লুদ্ধক ভাই: হ্যাঁ। অবাক হলে নাকি?
নয়ন: জ্বী, কিছুটা অবাকই তো হলাম।
লুদ্ধক ভাই: (হা হা করে অট্ঠাসি দিয়ে বললেন) বুঝতে পেরেছি তুমি কি ভাবছো। রিস্কি বিজনেস! এই তো?
নয়ন: জ্বী।
লুদ্ধক ভাই: আরে আমিই তো পারবো। কম ব্যবসা করেছি নাকি? কত জটিল জটিল ব্যবসাই তো করলাম। ঐ লেবেলের লোকজনকে সন্তুষ্ট তো এম্নিতেই করতে হয়। তুমি কি মনে করো যে, আমেরিকায় এটা নাই? আমেরিকায়ও আছে। বাংলাদেশে নাই মনে করো? বাংলাদেশেও আছে। ইনটেনসিটির কমবেশী থাকতে পারে, কিন্তু আছে। ওদেরকে তো সন্তুষ্ট করেই ব্যবসা চালাচ্ছি। তা একটা নাইটক্লাবের মালিক থাকলে, আমার একটু সুবিধাই হয়।
উনার কথা নয়ন নীরবে শুনে গেলো। মনে মনে ভাবলো, শালার দুনিয়া টাই এরকম।
লুদ্ধক ভাই: নয়ন তুমি একটু বসো। আমার একটা মিটিং আছে। ত্রিশ-চল্লিশ মনিট সময় লাগবে। ইন দ্যা মিন টাইম তুমি চা কফি খাও।
নয়ন: আপনি ব্যাস্ত থাকলে আমি বরং আজ যাই। আরেকদিন আসবো নে।
লুদ্ধক ভাই: আরে না না। কোথায় যাবে। বসো, পরে আমরা একসাথে লাঞ্চ করবো নে। আপাতত: চা খাও। সুন্দরী সেক্রেটারী-কে বলে দিচ্ছি তোমাকে চা খাওয়াবে। আর আমি আসতে আসতে ওর সাথে গল্প করে সময় কাটাও।
কফি, দামী বিস্কুট আর বাদাম নিয়ে ঢুকলো রূপসী তরুণীটি। বয়স বিশ-একুশ হবে। বুঝলাম লুদ্ধক ভাইয়ের অফিসের সেক্রেটারি। এই দেশে এই বিষয়টা খুব ফ্রিকোয়েন্ট যে মিলিয়নিয়ার বস দুতিনজন রূপসী সেক্রেটারী রাখেন, যাদেরকে দিয়ে টু-ইন-ওয়ান কাজ চলে। রুশ ভাষায় তাদেরকে ‘সেক্রেতুতকা’ (প্রস্টিটিউট-কে রুশ ভাষায় ‘প্রোস্তিতুতকা’ বলে তার-এর সাথে ছন্দ মিলিয়ে ‘সেক্রেতুতকা’ )। আবার অনেক ব্যবসায়ী আছেন, খুব স্ট্রিক্ট; অফিসে ওসব কিছু নাই। অফিস চলছে নেপোলিয়ান স্টাইলে। যদি কিছু করার দরকার হয়, তা তিনি করবেন বাইরে ভিন্ন মানুষদের সাথে দূরে কোথাও। লুদ্ধক ভাইয়ের অফিসের এই তরুণীটি কোন ক্যাটাগরির তা জানা নাই নয়নের। তাছাড়া লুদ্ধক ভাই একজন স্ট্রিক্ট ব্যবসায়ী। অফিসের সেক্রেটারীর সাথে কোন সম্পর্ক রাখার মতন তিনি নন।
নয়ন: কি নাম তোমার?
জ্বী, আমার নাম নাতাশা। রিনরিনে কন্ঠে কন্ঠে বললো। ছিপছিপে গড়নের মেয়েটি।
নয়ন: ভালো। নাতাশা নামটা সুন্দর। তুমি কি কোথাও পড়ালেখা করো?
নাতাশা: জ্বী। আমি একটা ইনস্টিটিউটে দূর শিক্ষণ প্রোগ্রামে পড়ি। এখানে পার্ট-টাইম চাকুরী করি।
নয়ন: কতদিন হলো জয়েন করেছে?
নাতাশা: তিন মাস।
নয়ন: তা কেমন লাগছে চাকুরী?
নাতাশা: খুব ভালো লাগছে। জানেন আমার নতুন কিছু ভালো লাগে। মিস্টার লুদোক-এর অনেক ব্যবসা আছে। কিন্তু এখন তিনি একটা নাইটক্লাব খুলছেন। সেখানে কাজ চলছে লোকজন নিয়োগ হচ্ছে, সরকারী লোকজন এসে এনকোয়ারী করছে, আরো কত কিছু। এই নতুনত্বের মধ্যে আনন্দই আলাদ।
নয়ন: হুম বুঝলাম, তুমি নতুনত্বে আনন্দ পাও। তা তুমি বেশ রূপসী!
নিজের প্রশংসা শুনে একগাল লাজুক হাসলো নাতাশা।
নয়ন আবার বললো, “দারুণ ফিগার তোমার। এরকম তো সচরাচর দেখা যায় না।”
কথা মোটেও সত্য নয়। এরকম ফিগারের কোন অভাব নাই এইদেশে। এদেশের মেয়েদের সাথে তুলনা করলে নাতাশা বরং এভারেজই। কিন্তু নয়ন জানে যে, প্রশংসা শুনলে মেয়েরা বিগলিত হয়ে যায়।
নাতাশা: (ভীষণ বিগলিত হয়ে) আপনার পছন্দ হয়েছে আমার ফিগার?
এই বলে সে একপাক ঘুরে নিজের ফিগারটা দেখালো নয়নকে।
আকাশী রঙের টপস ও টাইট কালো রঙের লেগিস পড়া ছিলো নাতাশা। ওর টপস-টা খাটো না। একটু লম্বা, নিতম্ব ঢেকে আছে। নয়ন ভাবলো, একবার ওকে বলবে নাকি, “টপস-টা কিছুটা তোল, আমি তোমার নিতম্বের শেইপ দেখতে চাই।” তারপর ভাবলো, না থাক।
নয়ন: তুমি যে রূপসী এতে কোন সন্দেহ নাই। কেন, তোমাকে এই বিষয়ে কেউ বলে না?
নাতাশা: জ্বী, কেউ কেউ বলে। এই কয়েকদিন আগেই, একটা নাইটক্লাবের ম্যানেজার আমাকে অফার দিলো যে, তাদের ক্লাবে ‘স্ট্রীপটিজ’ নাচতে। ভালো ফিগার না হলে তো আর কেউ এমন প্রস্তাব পায় না!
নয়ন: তা বটে। তা বটে।
মনে মনে ভাবলো। কি বলে এই মেয়ে? ওকে নগ্ন হয়ে নাচতে অফার দিয়েছে, আর ও সেটা নির্দ্বিধায় আমাকে বলছে? তাও এমন স্বাভাবিক টোনে?!
নয়ন: তা তুমি কি উত্তর দিলে।
নাতাশা: আমি ‘স্ট্রীপটিজ’ নাচ নাচবো না। অন্য কোন নাচ হলে নাচতাম।
নয়ন: (অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে) কেন বলতো? তোমার এত অপরূপ ফিগার ও সৌন্দর্য্য আর তুমি সেটা লুকিয়ে রাখতে চাও?
নাতাশা: হ্যা আমার ফিগার তো ঠিকই আছে। রূপ-সৌন্দর্য্য তো ঢেকে রাখার বিষয় না। কিন্তু জানেন, আমার খুব কমপ্লেক্স!
নয়ন: কিসের?
নাতাশা: আমি এত লোকের সামনে নগ্ন হতে পারবো না। কেমন যেন লজ্জ্বা লজ্জ্বা লাগে!
মদিরা রজনীর আঁধার অন্তরালে
সামগ্রিক উপলদ্ধি অন্বেষণে,
ঐ উত্থিত বৃন্তের অলি হতে চাই।
ধ্যানী বলাকার মত স্তনের মাস্তুলে বসে থাকবো।
চুম্বনের তুমুল বর্ষণ ঝরাবো উদ্ধত অহংকারী গিরিচূড়ায়।
ওড়না সরিয়ে ওড়নার মতই লেপ্টে থাকবো সমগ্র বুক জুড়ে।
লৌকিক অঙ্গুলী স্পর্শের শিহরণে পুনঃপুনঃ কম্পিত হবে
দুটি রসালো ক্ষুদ্র আঙুর।
নক্ষত্র রাত্রীর মৌনতায় দেখবো অপ্সরার মদির নৃত্য।
মোহনীয় মুগ্ধতায় দেখে নেব গুরুভার নিতম্বের বাঁক।
মোহনায় জেগে ওঠা ব-দ্বীপের শিরিষ ফুলগুলোকে
নেড়েচেড়ে দেখবো পরম মমতায়।
মসৃন উদরে মুখ ঘষে ঘষে জানাবো সোহাগ।
অনন্তকালের তৃষ্ণার আঁশ মেটাবো বাৎসায়নের ধ্রপদী শাস্ত্রে।
—————————————— রমিত আজাদ
রচনাতারিখ: ২৮শে অক্টোবর, ২০২১ সাল
রচনাসময়: বিকাল ০৪টা ৫৭মিনিট
Love in Metrorail ( 11 )
——————- Ramit Azad
আগের পর্বগুলি
https://www.facebook.com/ramit.azad/posts/10225428513556213