রাজীব গান্ধী, শ্রীলঙ্কা নীতি, IPKF ও গুপ্তহত্যা:
রাজীব রত্ন গান্ধী ছিলো ভারতের সপ্তম প্রধানমন্ত্রী। তিনি ইন্দিরা নেহেরু ও ফিরোজ জাহাঙ্গীরের পুত্র। ১৯৮৪ সালের ৩১শে অক্টোবর তার মা ইন্দিরা নিজ দেহরক্ষী কর্তৃক নিহত হলে মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে তিনি দেশের কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রীরূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। ১৯৮৯ সালের ২রা ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে পরাজয়ের পর পদত্যাগ করার আগ পর্যন্ত তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
রাজীবের শ্রীলঙ্কা নীতি:
শ্রীলংকায় চলমান সরকারী বাহিনী বনাম তামিল বিচ্ছিনতাবাদী গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে ভারত সেখানে তাদের সৈন্য প্রেরণ করে। এই ভারতীয় বাহিনীর নাম ছিলো ইন্ডিয়ান পিস কীপিং ফোর্স (IPKF)।
১৯৮৭ সালের ৩০ জুলাই, রাজীব গান্ধী শ্রীলঙ্কায় গিয়ে ইন্দো-শ্রীলঙ্কা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার একদিন পরে, রাষ্ট্রীয় গার্ড অব অনার নেয়ার সময় বিজিতা রোহানা নামে একজন সৈনিক গার্ড তাকে তাঁর রাইফেল দিয়ে আঘাত করে। রাজীবের মাথা লক্ষ্য করে আঘাত করলেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আঘাতটি লেগেছিলো রাজীবের ঘাঁড়ে। কয়েক ইঞ্চির জন্য সেযাত্রা বেঁচে গিয়েছিলো রাজীব। গার্ড বিজিতা রোহানা জানিয়েছিল যে, শ্রীলঙ্কার “তিনি যে ক্ষতি করেছিলেন” ঐ কারণেই রোহানার উদ্দেশ্য ছিলো রাজীব গান্ধীকে হত্যা করা।
পরবর্তিতে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী রণসিংহ প্রেমদাস ইন্দো-শ্রীলঙ্কা পিস একর্ড-এর বিরুদ্ধে থাকা স্বত্তেও রাষ্ট্রপতি জুনিয়াস রিচার্ড জয়বর্ধনের চাপে তা স্বীকার করেন। তারপর তিন মাসের মধ্যে ইন্ডিয়ান পিস কীপিং ফোর্স (IPKF) বিদায় নেবে, এই প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে ১৯৮৯ সালের জানুয়ারীতে প্রেমদাস রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ এর নির্বাচনে, শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি এবং ইউনাইটেড নাশনাল পার্টি উভয়েই চেয়েছিল IPKF বিদায় নিক এবং তারা ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ভারতীয় বাহিনী যেহেতু তামিল বিচ্ছিনতাবাদীদের সঙ্গেই লড়াই করছিল, সেহেতু ভারতের এই পুলিশী ভূমিকা ভারতের তামিল নাডু্তে অসন্তোষের কারণ হয়েছিল। রাজীব গান্ধী IPKF কে ফিরিয়ে নিতে অসম্মত হন এই বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে যে, গৃহযুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র রাস্তা হলো প্রেমদাস এবং জঙ্গি বাহিনী লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (LTTE) কে রাজনৈতিক চাপের দ্বারা এই একর্ড-কে স্বীকার করানো। ১৯৮৯ সালে রণসিংহ প্রধানমন্ত্রী হন এবং বাহিনী ফিরিয়ে আনা সম্পূর্ণ করেন। IPKF কার্যকলাপে ২,৪০০-এরও বেশি ভারতীয় সৈন্যের মৃত্যু এবং ২০০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
রাজীব গান্ধীর গুপ্ত হত্যা:
১৯৯১ সালের ২১শে মে রাজীব গান্ধী তামিল নাডুর, মাদ্রাজ থেকে ৩০ মাইল দুরে শ্রীপেরুম্বুদুরে যখন শ্রীপেরুম্বুদুর লোক সভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীর হয়ে প্রচার-অভিযান সভায় তখন গুপ্ত ঘাতক দ্বারা তাকে হত্যা করা হয়। এই গুপ্ত হত্যাকান্ডটি সংঘটিত করেছিলো লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম (LTTE)-এর আত্মঘাতী মানববোমা থেনমঝি রাজারত্নম, একে গায়েত্রী এবং ধানু বলেও জানা যায়।
রাত দশটা দশ মিনিটে একটি জনসভায় ধানু তার কাছে যায় এবং প্রধানমন্ত্রী কে অভিনন্দন জানায়। সে তারপর নিচু হয়ে তাকে প্রনাম করার অছিলায় তার পোশাকের ভেতরে বাঁধা একটি কোমোর-বন্ধনীর সঙ্গে রাখা ৭০০ গ্রাম ওজনের বোমাটির (RDX) বিস্ফোরণ ঘটায়। রাজীব গান্ধী এবং আরও অনেক মানুষ সেই বিস্ফোরণে প্রাণ হারায়। সে সময় রাজীন গান্ধীর বয়স ছিলো মাত্র ৪৭ বৎসর।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থমাসের সিদ্ধান্তে এই বিষয়টি স্পষ্ট হয় যে এই হত্যাকান্ডটি রাজীব গান্ধীর শ্রীলঙ্কায় প্রেরিত ইন্ডিয়ান পিস কিপিং ফোর্স (IPKF) দ্বারা শ্রীলঙ্কার তামিলদের ওপর অত্যাচারের জন্য LTTE প্রধান প্রভাকরণের রাজীব গান্ধীর ওপর শত্রুতার কারণ বসত।