সাগরসম ঈর্ষা
—- রমিত আজাদ
চন্দ্রহীন রাতি আঁধার নিশিথে তামসী কৃষ্ণপক্ষ,
পঞ্জিকার লিপি সপ্তমী তিথি রোহিণী নক্ষত্র।
অকস্মাৎ ভুত দেখা দিলো তথা, তখন মধ্যরাত,
ভগ্নগৃহে তার বসে ছিলো চাষী বিফল দিনাতিপাত।
“বর চাস চাষী? বর দেব, কি বর চাইবি বল?”
অশরীরি কেউ কৌতুক ভরে করিতেছে কোন ছল!
চাষীর আলয়ে শূণ্য গোয়াল, গোলায় রিক্ত ঢুঢু,
জীর্ণ কুটির এই ভাঙ্গে ভাঙ্গে, ভিটায় চড়িছে ঘুঘু।
কপাল কি তবে গিয়াছে খুলিয়া?
সোনা রাশি রাশি ধরিবে মেলিয়া?
হয়ে যাবো আজ লাখপতি আমি ক্ষৌণী বিশ্বলোকে,
পথেঘাটে লোকে সেলাম ঠুকিবে, দেখিবে মান্য চোখে!
“মৌন কেন চাষী? কি এতো ভাবিস? চেয়ে ফেল তোর বর।”
তাড়া দিলো ভুত, চাষী ভেবে চুপ, অস্থির মনে জ্বর।
অবশেষে বলে, “গাঁয়ের অঁচলে, পথের বগলে,
থাকে জ্ঞাতিভাই মোর, তমালের তলে।
দ্বিতল নিধান, মস্ত দালান, আরো কত রোশনাই!
দশগাঁয়ে তারে, চেনে সব নরে, ধনের হিসাব নাই।
আরও লেখে পুঁথি, কবিতা ও গীতি,
জ্ঞানে ও গুনে বড়ই মহতি!
পুঁথিপাঠ তার শোনে রাতভর বৃদ্ধ ও কচি, ঘরের লক্ষী,
সুর শুনে তার, বশীভূত হয়, বনের হরিণী, মনের পক্ষী।
জ্ঞাতিভাই মোর দু’চোখের বিষ, কাড়িয়া নিয়াছে নিদ্রা,
ওর ভালো মোর, ছুরি হয়ে কাটে কলিজা ও আত্মা।
দিবে যদি বর, সয় না তো তর, না চাই নিজের কিছু,
জ্ঞাতিভ্রাতাটিকে শেষ করে দাও, উদ্বেগ নিক তার পিছু।
সফলতা তার বিফলতা কর, ফসল ভাসাও, গবাদি মারো,
সব পরিচয় তার প্রকম্পিত কর, ধন-মান-জ্ঞান নির্মূল করো।
আমা লাগি আমি নাহি চাই কিছু, শুধু চাই তার ধ্বংস,
জোত জমি ক্ষেত সকলি ডুবাও, করো তারে নির্বংশ।
বর চাহিয়া খেদ ঢালে হিংসুটে, সর্পের মত করে ফোঁসফোঁস,
ঈর্ষান্বিত চাষী অবশেষে ঝাড়ে, এতটা কালের আক্রোশ।
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২
(ইতঃপূর্বে প্রকাশিত)
৩ replies on “সাগরসম ঈর্ষা”
অসাধারণ কবিতা । ধন্যবাদ ডঃ রমিত আজাদ স্যারকে ।
অনেক ধন্যবাদ সাকি বিল্লাহ-কে। এত চমৎকার একটি ব্লগ তৈরী করে আমাদের লেখার সুযোগ দেয়ায় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আপনাকেও ধন্যবাদ স্যার ।