সোহরাওয়ার্দী পুত্র রাশেদ সোহরাওয়ার্দী আর নেই
১৯৯৮ সালের কথা। মস্কো এ্যাম্বেসীতে বসে আমি বললাম, “জাতীয় নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর একজন রুশ (ইউক্রেণীয়) স্ত্রী ছিলেন।” আমার এই কথা শুনে কয়েকজন হো হো করে হেসে দিলেন। শুনে আমার মেজাজ খারাপ হলো! আমি আরো জোর দিয়ে কথাটা বললাম। এসময় তদানিন্তন রাষ্ট্রদূত আতাউর রহমান খান কায়সার (প্রবীন রাজনীতিবিদ, আওয়ামীলীগার) ঐ রুমে এলেন। একজন বললেন, “স্যার, রমিত আজাদ বলছেন যে, ‘হোসেন সোহরাওয়ার্দীর একজন রুশ (ইউক্রেণীয়) স্ত্রী ছিলেন’, কথাটা কি ঠিক?” রাষ্ট্রদূত বললেন, “হ্যাঁ সোহরাওয়ার্দীর একজন ইউরোপীয় স্ত্রী ছিলেন। তবে তিনি বোধহয় রাশান না, হাঙ্গেরী বা যুগোস্লাভিয়ার হতে পারেন।” আমি বললাম, “তার স্ত্রী ভেরা মস্কোর ‘বালশোই থিয়েটার’-এর অভিনেত্রী ছিলেন। এবং তাদেরই সন্তান রাশেদ সোহরাওয়ার্দী।” কিন্তু উনারা আমার কথা খুব একটা বিশ্বাস করতে চাইলেন না। তার সপ্তাহ খানেক পরে আমি আবার এ্যাম্বেসীতে গেলে উনাদের জিজ্ঞাসা করলাম, “কি আপনাদের খোঁজ নেয়া হলো?” এবার উনারাই বললেন, “আপনার কথাই ঠিক।” তার কিছুদিন পরে রাষ্ট্রদূত মহোদয় জানালেন যে, রাশেদ সোহরাওয়ার্দী বাংলাদেশে মন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছেন, তবে তাকে রাশিয়ায় রাষ্ট্রদূত করে পাঠানোর কথাও ভাবা হচ্ছে।
(স্মৃতি থেকে লিখলাম)
বাই দ্যা ওয়ে, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আপন ভাই শাহেদ সোহরাওয়ার্দী একজন বহু ভাষাবিদ পন্ডিত ছিলেন। তিনি বিংশ শতকের শুরুর দিকে মস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তখন তিনি মস্কোর ‘বালশোই থিয়েটার’-এর অভিনয় করতো এমন একটি পরিবারের সাথে ঘনিষ্ট ছিলেন। ঐ পরিবারেরই কন্যা ছিলেন ভেরা তিসসেনকো। সে সময় হঠাৎ রাশিয়ায় কম্যুনিস্ট অভ্যুত্থানের গন্ধ পাওয়া গেলে শাহেদ সোহরাওয়ার্দী মস্কো ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি ঐ রুশ পরিবারটিকেও একই পরামর্শ দেন। পরিশেষে ঐ পরিবারটিকে নিয়ে তিনি কলিকাতা চলে আসেন। সেই সুবাদে সুন্দরী তরুণী ভেরা তিসসেনকো-র সাথে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরিচয় ও প্রণয় ঘটে। তারপর বিবাহ। শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও ভেরা তিসসেনকো-র সন্তান-ই রাশেদ সোহরাওয়ার্দী। তবে ঐ বিয়ে বেশিদিন টেকে নাই। ভেরা তার স্বামী সোহরাওয়ার্দীর বিরুদ্ধে একটি বিবাহ বিচ্ছেদ মামলা দায়ের করেছিলেন। মামলাটি খুব দীর্ঘ সময় ধরে চলেছিলো। অবশেষে মামলার রায় ভেরা-র পক্ষে যায়। ভেরা ছেলেকে নিয়ে লন্ডনে চলে আসেন ও সেখানে অভিনয় পেশায় মনযোগ দেন।
(আমার জানামতে)
ফেব্রয়ারী ২০১৯-এ রাশেদ সোহরাওয়ার্দী তার লন্ডনস্থ বাসভবনে ইন্তকাল করেছেন।