স্যালুট দাদাজান
———- রমিত আজাদ
সকালে ঘুম থেকে উঠলেন মি: এক্স। আজ রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের বিশিষ্ট জনেরা থাকবেন সেখানে। সেই সেমিনারে বিশিষ্ট নাগরিক হিসাবে দাওয়াত পেয়েছেন মি: এক্স। ইস্যুটি খুব গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর তাই তিনি সেখানে যোগ দেবেনই। তবে তার আগে উনার ছোট্ট শিশুটিকে স্কুলে পৌঁছে দিতে হবে। হঠাৎ ঝমঝম বৃষ্টি শুরু হলো, ভাদ্র মাসে ঘোর বর্ষার মত বর্ষণ! সেই বৃষ্টি আর থামতেই চায়না। কালো মেঘের আঁধারীতে আর বৃষ্টির ঝমঝম শব্দে মি: এক্স-এর শিশুটি আরামে ঘুমাচ্ছে। থাক ঘুমাক, ড্রাইভার না আসা পর্যন্ত ঘুমাক ও, ছোট্ট মানুষ! ভাবলেন মিঃ এক্স। গাড়ীর ড্রাইভার ফোন দিয়েছে যে, সে প্রবল বর্ষণের কারণে পথিমধ্যে আটকে গিয়েছে। ক্যালকুলেশন করতে লাগলেন মি: এক্স, কখন বৃষ্টি থামবে আর তার শিশু সন্তানকে স্কুলে দিয়ে তিনি সেমিনারে যোগ দিতে যাবেন। সময়মতো সেমিনারে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু বৃষ্টি যেন আর থামতেই চায় না। এদিকে স্কুলের সময় এগিয়ে আসছে। গাড়ীর ড্রাইভার আবারো ফোন দিলো, “স্যার সাইকেলে চেপে কিছুতেই আসতে পারছি না, ভীষণ বৃষ্টি”।
আবার ঘড়ির দিকে তাকালেন মি: এক্স, শিশুর স্কুল শুরুর সময় পার হয়ে গেছে। থাক, একটু দেরীতে স্কুলে নিয়ে গেলেও কিছু হবেনা, প্রিন্সিপাল খুব বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন সহানুভূতিশীল একজন মানুষ, তার উপরে তিনি মিঃ এক্স-এর বন্ধু-প্রতীম। কিন্তু বৃষ্টি আর কিছুতেই থামতে চায়না!
আবারো ঘড়ির দিকে তাকালেন মি: এক্স, স্কুলের সময় ঘন্টাখানেক পেরিয়ে গেছে, এবার সেমিনার শুরুর সময় খুব কাছাকাছি। নিজ স্ত্রীর দিকে তাকালেন তিনি। স্ত্রী বললেন, “থাক, বাবু ঘুমাক, এই বৃষ্টিতে আর স্কুলে যেতে হবে না। তুমি সেমিনারে যাও।”
ড্রাইভার ফোনে বললো, “স্যার আপনার খুব জরুরী দরকার? তাহলে আমি বৃষ্টিতে ভিজেই আসছি।” বৃষ্টিতে ভিজে চলে এলো নিষ্ঠাবান চালক। মি: এক্সের স্ত্রী তাকে টাওয়েল ও জামা দিলেন, গা মুছে জামা পাল্টে তৈরী হয়ে নিলো ড্রাইভার।
সময়মতো সেমিনারে পৌঁছাতে দ্রুত বের হলেন মিঃ এক্স। বের হওয়ার আগে, আরেকবার তার শিশুটির দিকে তাকালেন তিনি। এখনো নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সে। বেড রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরূমে এলে দেয়ালে যত্ন করে টাঙানো একটি ছবির দিকে নজর পড়লো মিঃ এক্সের। এটি তার শ্রদ্ধেয় দাদাজানের ছবি। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সংগঠক এই দাদাজান ১৯৪৭ সালের আগে একসাথে দু’টি আন্দোলন করেছিলেন; প্রথমটি, দেশ থেকে দখলদার বৃটিশদের তাড়ানোর আন্দোলন, দ্বিতীয়টি, পূর্ব বাংলার নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক বাসভূমির আন্দোলন।
যদি সেদিন উনাদের আন্দোলন সফল না হতো, তাহলে আজ হয়তো এই রোহিঙ্গাদের মতই নির্যাতিত থাকতে হতো আমাদের, অমন নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো না আমার শিশুটি, ভাবলেন মিঃ এক্স। আজ আমাদের নিজেদের রাষ্ট্র আছে, নিজেদের প্রতিরক্ষা বাহিনী আছে, নিজেদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সবই আছে; তাই আজ আমরা ওয়েল এ্যাডভান্সড এবং ওয়েল প্রটেক্টেড। আমাদের দাদাজানদের বিচক্ষণতা ও ত্যাগের কোন তুলনা হয়না! নিজ দাদাজানের ছবিটিকে একটি সশ্রদ্ধ স্যালুট দিলেন মিঃ এক্স। তারপর বেরিয়ে পরলেন উনার আজকের দায়িত্ব পালনে, আরেকটি নির্যাতিত জনগোষ্ঠিকে সাহায্য করতে হবে।
তারিখ: ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
সময়: সন্ধ্যা ৮ টা ২ মিনিট