হ্যাপী নিউ ইয়ার ২০২২ (পর্ব –৭, শেষ পর্ব)
হ্যাপী নিউ ইয়ার ২০২২ (পর্ব –৭, শেষ পর্ব)
——————————————- রমিত আজাদ
শাড়ী পরিহিতা তানিয়া। শাড়ীটির রঙ ও ডিজাইন আমার আজও মনে আছে। তবে এখানে আর তা উল্লেখ না করি। আপনারা যে যার মত করে ভেবে নিন। শাড়ীতে তানিয়ার ফিগারটা যে কত সুন্দর ফুটছে তা আমি ভাষায় বর্ণনা করতে পারবো না। কপালে টিপ ইউরোপীয় মেয়েরা পড়েনা। তাই টিপ-এ তাদের আনইউজুয়াল লাগে! কিন্তু তানিয়ার কপালের টিপটাও যেন একটা সন্ধ্যামালতি ফুল হয়ে ফুটেছিলো! তানিয়ার হাসিটা বরাবরই ছিলো নির্মল ও সুন্দর! ঐ মুহূর্তে আমি ঐ নির্মল হাসিটিরই অপেক্ষা করছিলাম।
নিউ ইয়ারের রাত্রীর নাচঘরের ঐ আলো-আঁধারীতে অনেকেই তাকিয়ে দেখছিলো, আমার আমন্ত্রণের জবাব তানিয়া কিভাবে দেয়! আমি নিজেও তো সেই রিএ্যাকশন দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। এ যেন এক জয়-পরাজয়ের হিসেবের ক্ষণ! আমি হয় প্রত্যাখ্যাত হবো, অথবা স্বাগত হবো। হয় পরাজিত হবো, অথবা জয়ী হবো। আমি পরাজয় ভালোবাসি না। সেদিন, সেই ক্ষণে জয়ী হওয়ার জন্যই আমি উন্মুখ ছিলাম, জয়ী হওয়ার জন্যই হাত বাড়িয়েছিলাম। সুখী হওয়ার জন্য হাত বাড়িয়েছিলাম কিনা, তা এখনও জানি না।
তানিয়া আমার দিকে তাকালো। আমাদের পরিচয় অনেক দিনের। তবে আমাদের কথাবার্তা কয়েকটি বাক্যের বেশি কোনদিনও আগায়নি। পাশাপাশি বসে মন খুলে কথা বলার তো প্রশ্নই ওঠে না! নাচের আমন্ত্রণে আমার বাড়ানো হাত দেখে কি তানিয়া অবাক হয়েছে? ভিন্ন প্রশ্নও তো করা যেতে পারে। তানিয়া কি এই বাড়ানো হাতটির-ই অপেক্ষা করছিলো? তানিয়া আজ হঠাৎ শাড়ী পড়ে এলো কেন?
আবারো লক্ষ্য করলাম যে, অনেকেই এখনো তাকিয়ে রয়েছে, ফলাফল দেখার জন্য। আমি ঠোটে ও চোখে মিষ্টি হাসি নিয়ে তানিয়ার দিকে তাকালাম। বিস্মিত তানিয়ার চোখে হঠাৎ হাসির ঝলকানী দেখা গেলো! পাঠকরা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, অমন হাসির ঝলক বা ঝিলিক আমি ইতিপূর্বে কোনদিনই কারো চোখে দেখিনি! অতঃপর তানিয়াও বাড়িয়ে দিলো তার অপরূপ হাত। বা আমার বাড়ানো হাতে সমর্পন করলো তার হাত। আমি নির্ভয়ে ও নিঃসঙ্কোচে তার হাতটি ধরলাম। পেলব ও মধুর ঐ হাতটি আমার হাতে পাওয়ায় সেদিন যে অনুভূতি আমার হয়েছিলো, তা কোনদিনই কোন ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব না আমার পক্ষে!
আমার ডান হাতটিতে তার একটি হাত পাওয়ার পর, আমার বাঁ হাতটি তার কটিদেশে রাখলাম। এই যুগল অর্ধ-আলিঙ্গনের ছোঁয়ায় যেন সুরেলা হয়ে উঠলো পুরো নাচঘরটি, হয়তো পুরো নিউ-ইয়ারের রাত্রিটি। উৎসুক চোখগুলো তখন কি ভাবছিলো, তা নিয়ে গবেষণা করার সময় বা প্রয়োজন তখন আমার ছিলো না। আমি তো তখন আর আমাতেই ছিলাম না! সুরের মূর্ছনা ও যুগল নাচের তালে তালে আমিও ভাসছিলাম, কল্পিত কোন এক মেঘেদের দেশে। ‘চলো সাজনা যাহা তক ঘাটা চলে’।
কতক্ষণ যুগল ধীর-নাচটি চলেছিলো আমি জানি না। হয়তো মিনিট পাঁচেক। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছিলো, তা যেন অনন্তকাল; অথবা মাত্র কয়েক সেকেন্ড! এই অনন্তকাল অথবা কয়েক সেকেন্ড আমাদের দু’জনার আর অন্য কোনদিকে তাকানোর ফুরসৎ ছিলো না, আমরা তখন কেবলই একে অপরের দিকে তাকিয়েছিলাম। ‘দু’জনাই দু’জনাতে মুগ্ধ! দু’জনার রূপে কত সুন্দর, দু’জনার গীতালীর ছন্দে, তন্ময় দু’জনার অন্তর!’
নাচ শেষ হওয়ার পর, হাত না ছেড়েই আমি বললাম, “চলো আমার রুমে যাই।” তানিয়া বললো, “চলো।”
তানিয়া যখন আমার রুমে প্রবেশ করলো, তখন পিছন থেকে কেউ তা লক্ষ্য করছিলো কিনা আমি তা জানিনা। ড্যাম কেয়ার!
আমি বললাম, “বসো তানিয়া।” তানিয়া বসলো। নাচঘরের আলো-আঁধারীতে তো অতটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো না। এবার জোরালো আলোতে ওকে খুব ভালোভাবে দেখলাম। নিউ-ইয়ারের রাত্রীতে এ যেন এক সাক্ষাৎ ঝলমলে পরী নেমে এসেছে সুনীল আসমান থেকে। ওর চুলে ওগুলো কি? জরি? নাকি সুদুর নীহারিকাপুঞ্জের তারকাদীপ্তি! হ্যাঁ পাঠকগণ শাড়ী পরিহিতা রূপসী তানিয়ার জরিন শরীরের সবগুলো বাঁকই খুব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিলো সেদিন। তবে তার কোন বর্ণনা আজ আমি এখানে দেব না। যার সাথে মনের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে, তার শরীরের বর্ণনা দেয়া শালীন নয়। ঐ সৌন্দর্য্য কেবল আমার মনেই অমলিন থাকুক চিরকাল!
আমি: কফি খাবে তানিয়া।
তানিয়া: খাবো। বানাও।
আমি: তুমি কি টায়ার্ড?
তানিয়া: না। সেরকম কিছু না। আমি শুধু তোমার হাতে বানানো কফি খেতে চাইছি।
আমি: ঠিকআছে। বানাচ্ছি।
তানিয়া: এই ডিশগুলো তো সব তুমিই বানিয়েছ, তাইনা? আমি কিচেনে দেখেছি।
আমি: হ্যাঁ। খাও।
তানিয়া: নাহ। এখন না। পরে খাবো। আপাতত: শুধু কফি খেতে চাই।
আমি দুই কাপ ধূমায়িত কফি বানিয়ে, ওর হাতে এককাপ দিলাম। তারপর আর এককাপ নিজ হাতে নিয়ে, ডিভানে ওর পাশে গিয়ে বসলাম। তানিয়া কফির কাপে চুমুক দিয়ে, আমার দিকে তাকালো। এরপর ওকে কি বলবো আমি? যা বলতে চাই, তা কি বলা ঠিক হবে? আমি গভীর ভাবনায় পড়ে গেলাম।
এর জন্য আমাকে সাহস সঞ্চয় করতে হবে। নাচঘরে আমি বিজয়ী হয়েছি। এরপর আর পরাজিত হতে চাই না।
তানিয়াই বললো,”কি? কিছু বলবে?”
আমি: আজ নিউ-ইয়ারের রাত্রী।
তানিয়া: জানি তো। সেলিব্রেশন চলছে।
আমি: সেলিব্রেশন কি শেষ হয়েছে?
তানিয়া: না। আরো চলবে। দিনের আলো না ফোটা পর্যন্তই নিউ-ইয়ারের রাত্রী। সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত চলবে এই সেলিব্রেশন।
আমি: ঠিক।
তানিয়া: তুমি কি বিশেষ কিছু বলতে চাও?
আমি: হ্যাঁ। আমি এমনভাবে সেলিব্রেট করতে চাই যেন তোমার ও আমার দুজনার জন্যই এই নিউ-ইয়ার নাইট-টা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে।
তানিয়া: ও আচ্ছা।
আমি: কি রাজী।
তানিয়া: ঠিকআছে। আমি রাজি।
এই কথা বলে তানিয়া মৃদু হাসলো। ঐ মুহূর্তে আমার মনে হলো যে, এত সুন্দর হাসি আমি এই পৃথিবীতে আর কারো দেখি নাই!
(সমাপ্ত)
(এই গল্পের চরিত্রগুলো কাল্পনিক)
রচনাতারিখ: ১২ই জানুয়ারী, ২০২২ সাল
রচনাসময়: রাত ০১টা ১৯ মিনিট
Happy New Year 2022 (7)
————— Ramit Azad