সাকি বিল্লাহ্
আমাকে একটু ওপাড়ে পাঠাতে পারবে, ওপাড়ে,
যেখান থেকে কেউ কখনো না ফিরে,
লম্বা ছুটি, নিরন্তর অবকাশ,
ধ্র“ব সত্য, অদৃশ্য নীল আকাশ ।
মাঝি নিশ্চুপ, বৈঠা হাতে এপারে,
তুমি বড়ই দুখী, যদি চাও চলো ওপাড়ে ।
হাতের প্রদীপ আমার নিভু নিভু করে, ক্ষণে,
ঝিরি ঝিরি বাতাসে, আর শেষবিন্দু কেরোসিনে,
সলতে পুড়ে পুড়ে শেষ হচ্ছে আমার,
সময় ঘনিয়ে আসছে ওপাড়ে যাবার ।
তবুও মাঝি নিশ্চুপ, বৈঠা চলছে না,
থেমে থেমে ঝিঁ ঝিঁঁ’র নিরলস বন্দনা ।
নিকষ কালো অন্ধকার রাতে,
দাড়িয়ে থেকে থেকে পায়ে খিল লেগেছে তাতে ।
বিদায় বেলায়, স্বজনের মেলায়,
ভেসে যাচ্ছি অজানার ভেলায় ।
তবুও মাঝি বলছে না কিছুই,
“তোমার সময় শেষে জানবে সবই” ।
হঠাৎ বুকের পাঁজরে লাগল কি যেনো,
ভয়ঙ্কর শীতল, শূন্যতায় ভরা অনুভূতি এক কোনো
মুহূর্তে সব ওলট পালট লাগছে আমার,
মৃত্যু ভয়ে জর্জরিত সারা শরীর
শিশু থেকে মৃত্যু অবধি যত কিছু আছে,
চিত্রিত সব কল্পনা আমার কাছে
রং তুলির ছবির মত কত কি যে,
সারাটা জীবন, দৃশ্যপটে, আঁকছে কেউ নিজে ।
বুকের সে ব্যথা অনুভূত হচ্ছে না আর,
মাঝি নীরবতা ভেঙ্গে “সময় হয়েছে যাবার”
যাবার জন্য ব্যকুল ছিল হৃদয়,
সমন শুনে মনটা যেন কাঁদে সে যন্ত্রণায় ।
কলমের কালি শেষ হলে যখন তাই,
ছুড়ে ফেলে দেয় দুরে সবাই
আমার সে পাড়ে, এমনই কি ছিলো?
আমাকে নয়, আমার সম্পদকে বাসতো ভালো?
আমি এখন মহাকালের ঊর্ধ্বে,
মহাবিশ্বের মহাকালের সান্নিধ্যে ।
মাঝি: “তোমার যাবার অনুমতি মিলেছে”
স্রস্টা কিছু চাইছেন তোমার কাছে
আমি অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে,
অন্তরের সব মরুভূমি হচ্ছে শুকিয়ে ।
কেউ কিছুই বলছে না আমাকে,
কিছুই তো নেই, যে, দেখাব স্রস্টাকে
হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ছাড়া আর,
সাথে তাকে দেখাব কিছুই নেই আমার ।
সত্যের পথে, অজানাকে জানতে,
পাড়ি দিয়েছি সারা জীবন øাতে
আমাকে যেতে দাও ওপাড়ে,
ভিড়তে দাও সকল রহস্যের দ্বারে
আমার যাবার অনুমতি নাকি মিলেছে,
তুমিই তো মাঝি পথ চিনেছো ।
মাঝি: “আমি আর বেয়ে যেতে পারছিনা,
দুহাত আমার অবশ কোনো পাখির ডানা”
কিন্তু, তুমি তো আদেশ প্রাপ্তা,
তুমি ছাড়া আমার অজানা রাস্তা,
মাঝি, তুমি কি শুনতে পাচ্ছ?
আমাকে মাঝ পথে রেখে কোথায় যাচ্ছ?
আমি এখন মধ্য পথে,
ভাসমান এক কাল্পনিক রথে
আমি একা, বড় একা, সেই রথে,
কেউ টানছে এপারে কেউ ওপারের পথে
স্রস্টা আর মানুষের ভালোবাসার –
টানাটানি পড়েছে, আমি কার?
তাই আমি এখন মধ্যিখানে,
আমার ইচ্ছায় যেতে পারি, এখানে বা ওখানে ।
যখন মানুষের ভালোবাসা শেষ হবে,
অফুরন্ত ভালোবাসা স্রস্টার পড়ে রবে
আমি তখন পাড়ি দেবো উন্মুক্ত ভেলায়,
ভালোবাসি বলে, “হে স্রস্টা তোমায়” ।
মঙ্গল তব মঙ্গল হোক হে সৃজিত সৃষ্টি,
মরণ যেন যবনিকা ধারা, সীমাবদ্ধতার কৃষ্টি,
তাই উজাড় করো মনটা তোমার ঊর্ধ্ব করো দৃষ্টি,
মানুষের উপকারে ঝরাও তোমার ভালোবাসার বৃষ্টি।।