War Sometimes Unites Us (যুদ্ধের চিঠি)
যুদ্ধের চিঠি
————————- রমিত আজাদ
আবার অনেক বছর পর তোমার চিঠি পেলাম।
আমি তো উপনিবেশিক দ্বীপান্তরে ছিলাম না।
তুমিও ছিলেনা সোভিয়েত নভোচারী।
তবুও হয়নি চিঠির আদান-প্রদান।
একসময় তুমি লিখতে, আর আমি নিরুত্তর থাকতাম।
তারপর আমি লিখতে শুরু করলাম,
আর তুমি অভিমানে নিশ্চুপ হয়ে গেলে!
তারপর একসময় ভাবলাম,
থাক, তার মত সে ভালো থাক।
আমিও থাকি আমার মতন।
আমার এ অর্থহীন জীবনের কি গল্পই বা তাকে বলবো?
বিরহের ছাব্বিশটি বছর ছিলো দুই মিলেনিয়াম জুড়ে!
আমি ভেবেছিলাম, আমার এই অর্থহীন জীবনটি একটি যুদ্ধ।
বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে ধানক্ষেতকে বাগানবাড়ী বানানোর যুদ্ধ।
রাজধানীর বুকে কয়েকটি প্রকোষ্ঠ ক্রয়ের প্রচেষ্টার যুদ্ধ।
প্রবল আকুতি উপেক্ষাপূর্বক নিজ পরিবারকে বঞ্চিত করে,
জাতীয় রাজনীতিকে কঠিন অথবা সহজ করে দেয়ার যুদ্ধ।
পেশাজীবি মিথ্যুক ও কুচক্রীদের সাথে সংগ্রাম করে টিকে থাকার যুদ্ধ।
বিবাহিতা নারীর নিবেদিত প্রেমকে প্রত্যাখ্যান করার যুদ্ধ।
অবিবাহিত তরুনীর প্রেমে পড়ার যুদ্ধ!
মায়াবী মেয়েটির হাতে বানানো চায়ের তৃষ্ণা মেটানোর যুদ্ধ।
কবিতা বোঝেনা এমন নারীকে নিয়ে কবিতা লিখার যুদ্ধ।
ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া মেয়েটিকে নিয়ে, কঠিন বাংলায় কবিতা লেখার যুদ্ধ।
আমি যুদ্ধ চাইনা।
যুদ্ধ বিরহ ঘটায়।
এতকাল আমি যেসব যুদ্ধ করেছি, ওগুলো কোন ধর্তব্যের মধ্যেই পড়ে না।
আমার সব যুদ্ধগুলো মামুলি।
ওখানে জান হারানোর ভয় কম।
যুদ্ধ তাকেই বলে,
যখন কাকডাকা ভোরে সহসা ঘুম ভাঙে আকাশ থেকে বৃষ্টির মত ঝরা বোমার শব্দে!
যুদ্ধ তাকেই বলে,
যখন দূরদেশে বন্ধুকে ফোন করে ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,
“গ্রামে ভীনদেশী সৈন্যরা প্রবেশ করেছে। জানি না বেঁচে থাকবো কিনা।
আমার ঘরে বৃদ্ধা অসুস্থ মা। মায়ের কি হবে?”
যুদ্ধ তাকেই বলে,
যখন প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দেখি চত্বরের ধ্বংসস্তুপ।
যুদ্ধ তাকেই বলে,
যখন সহপাঠিনী বলে, “গ্রামে পালিয়েও রেহাই পাচ্ছিনা।
কাল মধ্যরাত থেকে ভোর অবধি, বোমারু বিমানের গোলার শব্দে ঘুমুতে পারিনি!”
এই যুদ্ধের ডামাডোলে কেমন আছে সাগরিকা?
দুই মিলেনিয়াম পরে আমি আবার চিঠি লিখলাম।
কন্ঠে আকুতি ঝরিয়ে লিখলাম, “শুধু কেমন আছো জানিও।”
জানি সে অভিমান করে আছে।
আমার সাথে আড়ী নিয়েছে।
কথা বলবে না বলে।
কিন্তু এবার সে উত্তর দিলো।
জানালো, আপাতত ভালো আছে সে।
যুদ্ধ এখনও তাকে গ্রাস করেনি।
আমি যেন অত দুশ্চিন্তা না করি।
বুক থেকে হিমালয়ের ভার নেমে গেলো।
কেনো?
সে ভালো আছে বলে, নাকি এতকাল পরে আমার চিঠির জবাব দিলো বলে?
যেটাই হোক,
আপাতত বুঝলাম,
যুদ্ধ কেবল বিরহ নয়, মিলনও ঘটায়!
রচনাতারিখ: ২০শে মার্চ, ২০২২ সাল
রচনাসময়: রাত ১১টা ৫৭ মিনিট
War Sometimes Unites Us
——————— Ramit Azad